* ব্যবসায়ীকে অপহরণে ব্যর্থ হয়ে ইয়াবার তকমা দিয়ে অপপ্রচার
* মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হত্যার হুমকি ব্যবসায়ি ফজল কাদেরকে
* দ্রুত গ্রেফতারের দাবি ভুক্তভোগীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চকরিয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিরা। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। প্রতিবাদ করলেও হামলা থেকে রেহাই পায় না কেউ।
এমনকি তাদের ইয়াবা ব্যবসা সম্পর্কে জেনে যাওয়ায় ফজল কাদের নামের এক ব্যবসায়িকে অপহরণ করে গুম করার চেষ্টা চালায়। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয় তারা।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে এই অসহায় ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে মাদকের তকমা দিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করে। সম্প্রতি এমন কয়েকজন বেপরোয়া মাদক কারবারির দেখা মিলেছে।
এরা হলেন- খুটাখালী ইউনিয়নের মধ্যম মেধাকচ্ছপিয়ার মোস্তফা কামাল (৩৫), চকরিয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের (হাসেম মাস্টার পাড়া) পারভেজ উদ্দিন বাবু (৩১), ৯নং ওয়ার্ডের রমজান আলী (২৮), খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়ার কুতুব উদ্দিন (৩৩), চিরিংগা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাকিব (২৯), একই এলাকার ছোটন (২৭)। এরা একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
জানা গেছে, চকরিয়া ও কক্সবাজারে নিয়মিত ইয়াবার ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। মাদক ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছেন।
রয়েছে কোটি কোটি টাকার উপরে। যাদের একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরাত তারা এখন ইয়াবার ছোঁয়ায় কোটিপতি। চলাফেরা করেন বিলাসবহুল। রয়েছে একাধিক কার ও ভিআইপি মোটরসাইকেল। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক মামলা। প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত মাদক ব্যবসা করে বেপরোয়া তান্ডব চালান এই ইয়াবা কারবারিরা।
টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জুন ও জেলার বিভিন্ন স্থান হয়ে মাদকগুলো সাপ্লাই দেন এই মাদক কারবারিরা। নিয়মিত ১০-২০ জন মাদক বহনকারী রয়েছে তাদের। তারা ঢাকা চট্টগ্রামের বাসে করে পাকস্থলীর ভিতরে করে ইয়াবা পাচার করার তথ্য পাওয়া যায়। সেই সাথে নারীদের যৌনাঙ্গ ভিতরে করেও ইয়াবা পাচার করান বলে জানা যায়।
তাদের ইয়াবা ব্যবসার বেশকয়েকটি ডকুমেন্ট হাতে এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। যারমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মেসেজে দেখা যায় ইয়াবা লেনদেনের তথ্যাবলী। এতে দেখা যায় ইয়াবার ছবি দিয়ে স্যাম্পল দিয়ে দরদাম করতে।
সম্প্রতি তাদের মাদক ব্যবসার বিষয়ে ইতিমধ্যে লোমহর্ষক তথ্য উঠে এসেছে যে, ভয়ংকর এই মাদক নামের ইয়াবা ব্যবসা করে নারী থেকে শুরু করে এমন কোন কেলেঙ্কারি নাই তারা করেননা।
নানা কৌশলে ছদ্মবেশে ইয়াবা ব্যবসা করলেও এই পর্যন্ত কোন গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। তবে সম্প্রতি এক ব্যবসায়িকে অপহরণের চেষ্টা চালায় এই সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিরা। তখনই বেরিয়ে আসে তাদের চাঞ্চল্যকর মাদক ব্যবসার তথ্য।
চকরিয়ার ব্যবসায়ি ফজল কাদেরকে কেন বা কী কারণে অপহরণ করতে চেয়েছিল সে তথ্য খুজতে গিয়ে বের হয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসার তথ্য। গত বেশকিছুদিন আগে কক্সবাজার কলাতলীতে একটি মোটরসাইকেলে করে ইয়াবা আনছিল তারা। এই খবরটি ব্যবসায়ি ফজল কাদের জানতে পেরে প্রসাশনের কাছে খবর দেয়।
তখন প্রশাসনের নজরদারি বুঝতে পেরে গাড়িটি কৌশলে ফেলে ইয়াবাগুলো নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এসময় প্রশাসনের একটি সিভিল টিম অভিযানে ব্যর্থ হয়।
তারই জের ধরে ব্যবসায়িকে অপহরণ করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এই মাদক কারবারিরা।
ব্যবসায়ি ফজল কাদেরকে অপহরণের চেষ্টা:
গত ৯ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার চিরিংগা ষ্টেশনস্থ চকরিয়া ওসান সিটি মার্কেটে সন্ধ্যার সময় হামলা ও লুটপাট চালিয়ে ব্যবসায়ি ফজল কাদেরকে (৩৪) অপহরণের চেষ্টা চালায় তারা।
এসময় জনসম্মুখে পড়ে তাকে অপহরণ করতে না পেরে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, মোবাইল ও পকেটে থাকা নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ফজল কাদের গুরুতর আহত হয়ে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। তিনি মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের ঘোনাপাড়ার (৪নং ওয়ার্ড) বাসিন্দা ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে।
ঘটনার সময়ের একটি সিসিটিভি ভিডিওতে এই সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিরা ফজল কাদেরকে দফায় দফায় হামলা করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ি ফজল কাদের তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রাণ নাশের হুমকি ও ইয়াবার তকমা দিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ি ফজল কাদের।
এই সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বেপরোয়া মাদক কারবারিদের বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদের কাছে বারবার কল করা হলেও কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।